ধনে জ্ঞানে বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই

in BDCommunitylast year

পৃথিবীতে মানুষের জন্মলগ্ন থেকে পরলোকে যাওয়ার আগে পর্যন্ত শিক্ষালাভের সময়কাল নির্ধারণ করা, কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাকেই বড় করে দেখে। তেমনভাবেই সামজিক মূল্যবোধ আর চিন্তাচেতনার মধ্যে তা গেঁথে যায়, যেন অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন মূল্য নেই, ভিত্তি নেই - শিক্ষালাভ করার কোন উদ্যোগ নেয়ার ফুরসত নেই। এভাবে একটি সমাজ কতদিন চলতে পারে?

তবে যতবারই বর্তমান বাংলাদেশী প্রজন্মকে দেখি, তাদের জীবনাচরণ আর চিন্তাভাবনা, শিক্ষালাভের মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাওয়া আর যদিও উচ্চশিক্ষা নিতেই হয় তার গন্ডি আবদ্ধ করে রাখে ভালো চাকরি বাকরি জুটানো আর তারপর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়া।

কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা চাই, ব্যাংক ব্যালেন্স চাই, চাই প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে কোটিপতি হওয়া। কারণ মানুষ ও সামগ্রিকভাবে দুর্দশাগ্রস্থ যে সমাজে বেড়ে ওঠা - সেখানে উচ্চাসন ও প্রতিপত্তি লাভের মোক্ষম উপায় ধনসম্পদের পাহাড় বানানো, এতটা যে আশেপাশের মানুষ মাথা উঁচু করে দেখে।

সমাজের উপরতলার বাসিন্দা সাজার শখ কারো কমে না। আফসোস যে এই ভেবে একটি জনসমাজের অধিকাংশ মানুষ যখন তাদেরকে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করা হয়, ধনজ্ঞান এ দুটির মধ্যে কোনটি বেছে নিবেন? যদি তাদের সে দুটির মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে সিংহভাগ মানুষ ধনের উন্নতিই চাইবে। কারন টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়, দালানকোঠা গড়ানো যায়, ক্ষমতা লাভ করা যায় আর ভরপুর উদরপূর্তি করা যায়।
Src

অন্যদিকে জ্ঞান সমপরিমাণে কি দেয়?

জ্ঞান দিয়ে কি পেট ভরে? খাবার পাওয়া যায়? দালানকোঠা গড়ানো যায় ? কিছুই না আপাতদৃষ্টিতে, কেননা দুটি পয়সা যদি জোটে তার প্রথমটি খরচ করতে হয় খাবার কিনে ক্ষুধার জন্য, যদি দুটি জোটে তাহলে ফুল কিনে নিতে হয়, শারীরিক চাহিদার পাশাপাশি মনের নন্দনতাত্ত্বিক হিসেব মেলানোর প্রয়োজন আছে।

প্রকৃৃত বাস্তবতায় দেখা যায় - ক্ষমতা গড়তে গিয়ে জ্ঞানকে বিসর্জন দিতে হয়। এতে করে উন্নত চিন্তাধারা বিকাশ লাভ করতে পারে না, তার সাথে আর্থ সামাজিক আর মনস্তাত্ত্বিক উন্নতি ঢাকা পড়ে যায়, যা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।

ধন আর জ্ঞানকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই, দুটোই সমাজে দরকার। অর্থ ছাড়া জ্ঞানে উন্নতি করারও সুযোগ থাকে না, যে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যে অর্জন করতে হয় তা বিনে পয়সায় পাওয়া যায় না, পরীক্ষায় পাশ করে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ, শিক্ষাজীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত করতে গেলেও অর্থের প্রয়োজন। এমনকি চক স্লেট শিক্ষা উপকরন কিনতে গেলেও টাকা ছাড়া গতি নেই।

এটা অবশ্য ঠিক, সবাই স্বীকার করে নিবে যে, ব্যাবসা বাণিজ্য, সংস্কৃতি আর অবকাঠামো উন্নতির জন্য ক্রমাগত আর্থিক দিকে ভালো হওয়া চাই। বিদেশ থেকে আমদানি- রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে সমূহ বিপদ দেখা দিবে। দীর্ঘ কাল ধরে
যে দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থান থেকে ক্রমশ পরিশীলিত একটি সমাজপটে এসে পৌঁছেছি তার জন্য সঠিক দিকে উন্নতি করতে হয়েছে।

এসব বাস্তবসিদ্ধ পথে উন্নত হতে হতে এক পর্যায়ে দেখা গেল নতুন জ্ঞান সংযোজনের পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। যার প্রমাণ এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নৈতিকতার অবনমন, পেশিশক্তির ব্যবহারে যে আলোর প্রতিভাদীপ্ত জ্ঞান সমাজকে আলোকিত করবে তার স্বাভাবিক বিকাশগত ধারাকে বিনষ্ট করে দিয়েছি।

বিনিময়ে কি পেলাম? পেলাম একটি জ্ঞানবিমুখ স্বার্থলোভী নতুন যুবসমাজ যাদের মগজে শুধু চাকরি বাকরিকেন্দ্রিক শিক্ষা পেয়েছি, যা কবি সাহিত্যিকদের জন্ম মৃত্যু সাল আর সাহিত্যকর্মের বিখ্যাত লাইন মুখস্থ করতে কেটে গিয়েছে। নতুন কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পাওয়া যায় না, সিকি নেতা আধুলি নেতা পাওয়া যায় যার জন্য এত অর্থক্ষয়, রাজস্বক্ষয়।
Src

তবে একটা কথা দিবালোকের মতো পরিস্কার, যদি জনসাধারণের মধ্যে ধনে জ্ঞানে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করতে হয়, জীবনে উন্নতি করতে হয় আর আধুনিক পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় তাহলে এ দুটি দিকে উন্নতি করতে হবে।

তার হাত ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো, প্রকৃতপক্ষেই মানুষ হিসেবে বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবো।

সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম যেদিন সকালে চোখ খুলে দেখতে পারবো মুগ্ধ চোখে সত্যিকার অর্থেই জ্ঞানী বাঙালিসমাজ পেয়েছি, নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়বে আর ক্রমশ উন্নতির দিকে পথলাভ করবে। সেদিন প্রাণভরে বাংলার বুকে শ্বাস নিতে পারবো, যেদিন যুগোপযোগী জ্ঞান সব অন্ধকারকে দূরীভূত করবে।